এইত্তো মামনি, একটু সবুর করো। সূর্য মাঝ আকাশে না পৌঁছালে চিড়িয়াখানা খোলার সম্ভাবনা নাই।
অপেক্ষার প্রহর গুনছে ইট্টু।
ওর বয়স ৫বছর। ওর আরেকটা ভাই ছিল, নাম বিট্টু। বিট্টু আজ থাকলে বয়স হতো ৮ বছর।
ভাই-বোন, মা-বাবা চারজনের সুখী পরিবার ছিল ইট্টুদের। সুন্দরবনের দক্ষিনপ্রান্তে বাবা-মায়ের সাথে বেড়ে উঠছিল ইট্টু-বিট্টুরা।
ইট্টু শান্ত প্রকৃতির একটা মেয়ে।
ইট্টুর বয়স যখন ২, সবে বুঝতে শিখেছিলো তখন বিট্টুর বয়স ছিলো ৫ বছর।
বিট্টু মোটেই শান্ত না, চঞ্চল প্রকৃতির। সারাদিন শুধু দৌঁড়ের উপর। ওর সমবয়সী কেউ ওর সাথে দৌঁড়পাল্লায় জিততেই পারতো না। সুন্দরবনের এ-প্রান্ত থেকে ও প্রন্ত সবই যেন ওর চেনা, চিরচেনা৷
চৈত্রের সকাল।
সুর্যের আলোকছটা গজারি গাছের বাহারী পাতা ছেদ করে বিট্টুর চোখে এসে পড়ে সবার আগে। হয়তো সূর্যের সাথে ওর সম্পর্ক সুমধুর বলে।
সূর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়ে যায় বিট্টুর দিন। বন্ধুদের নেতা সে, কিন্তু কাকডাকা ওই ভোরে ওর অলস বন্ধুরা ঘুমিয়েই থাকে। বিকেলে বাবা-মায়ের আদর পেতে সবার আগে ছুটে আসতো বিট্টু। এভাবেই চঞ্চলতায় পূর্ণছিল বিট্টুর শৈশব।
এমনই এক কাকডাকা ভোরে বেড়িয়ে পড়ে বিট্টু। প্রতিদিনের মতো আজও সে একাকী , নিঃসঙ্গভাবে বেড়িয়ে পড়ে দ্বীগবিদ্বিগ। সেদিন বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যার ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দে ভরে গেছে পুরো বন। কিন্তু বিট্টু ফেরেনি সেদিন। বাবা-মায়ের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে বিট্টু অপহৃত হয়েছে, ও আর ফিরবে না। ছোট্ট ইট্টু বাবা-মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে তাদের অসহায়ত্ব বোঝার চেষ্টা করে।
আজ বিট্টুর অষ্টম জন্মদিন। ভাইয়ের জন্মদিনে প্রতিবারের মতো এবারও ইট্টু যাচ্ছে চিড়িয়াখানা দর্শনে, মানব চিড়িয়াখানা। যে চিড়িয়াখানায় এক সময় বন্দী ছিলো ইট্টুর ভাই ছোট্ট হরিণ শাবক বিট্টু।
লেখাঃ সুরঞ্জন মজুমদার
0 Comments