বুক রিভিউ:





সত্য ঘটনা অবলম্বনে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক রচিত উপন্যাস "মা"। এই কাহিনীর সন্ধান তাকে দেন মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে।

"মা" উপন্যাস সম্পর্কে অনেকের মুখেই শুনেছি নানা ঘটনার বর্ণনা। বইটি যখন রাতে পড়া শুরু করলমা যতই পড়ি ততই যেন বিস্মিত হই, ধীরে ধীরে শরীরের লোক খাড়া হয়ে যায়। বইটি মুলত লিখা একজন সাহসী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর, সংগ্রামী মাকে নিয়ে।

সাফিয়া বেগমের একমাত্র ছেলে আজাদ জন্মগ্রহণ করেন কানপুরে, এর আগে একটি মেয়ে হয়েছিলো তার নাম রাখেন বিন্দু সে বসন্তে মারা যায়, আজাদের পরে আরো একটি ছেলে হয় ৭ দিনের মাথায় মারা যায়। আজাদের বাবা ইউনুস চৌধুরী ভারত-পাকিস্তান দুটো দেশ আলাদা হবার পরে বোম্বে থেকে স্বপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন এবং এক সময় শহরের বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠেন। ইস্কাটনে ২বিঘা জমির উপর তৈরী করেন বিশাল বাড়ী যেটাকে রাজ প্রসাদ বললেও ভুল হবে না। আজাদ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে ভর্তি হন। সাফিয়া বেগম ও তার সংসার খুব সুখেই কাটছিলো হঠাৎ আজাদের বাবা একটি বিয়ে করেন তখন তার মা কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এক কাপড়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে যান এবং ছেলেকে নিয়ে অতিকষ্টে দিনযাপন করতে থাকেন। অভাব-অনটনের মধ্যে আজাদ আই,এ পাশ করে, ১৯৬৪ সালে করাচি চলে যান সেখান থেকে বি,এ পাশ করে দেশে ফিরে আসেন, তখন দেশের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো ছিলো না, তাই আর করাচিতে ফিরে যাননি ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে এম,এ তে ভর্তি হন।১৯৭১ সালে যখন চারোদিক থেকে সবাই যুদ্ধে যোগ দিতে থাকে, তখন আজাদ তার মার কাছে যোদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চায়, মা অনুমতি দিলে সে বন্ধুদের সাথে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট আজাদ তার কয়েকজন গেরিলা বন্ধুদের সাথে বাসাতেই ছিলো, মধ্যরাতে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী তাদেরকে ধরে নিয়ে যায়, তখন আজাদের মা নিরুপায় হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকে। ধরে নেওয়ার পর আজাদকে প্রচুর অত্যাচার করা হয়, বলা হয় সে যেন বলে তার সাথে কে কে ছিলো, অস্র গুলো কোথায় কিন্তু আজাদ স্বীকার করে না। পরে তার মাকে দেখা করার সুযোগ দেয়, বলা হয় সে যাতে তার ছেলেকে স্বীকার করতে বলে তাহলে ছেড়ে দিবে আজাদকে। দেখা করতে গেলে-

আজাদ বলে, মা, কী করব? এরা তো খুব মারে। স্বীকার করতে বলে। সবার নাম বলতে বলে।
মা: ‘বাবারে, যখন মারবে, তুমি শক্ত হয়ে থেকো। সহ্য করো। কারো নাম যেন বলে দিও না।’
আজাদ: ‘আচ্ছা। মা, ভাত খেতে ইচ্ছা করে। দুইদিন ভাত খাই না। কালকে ভাত দিয়েছিল, আমি ভাগ পাই
নাই।’

পরেরদিন রমনা থানায় টিফিন কেরিয়ারে ভাত নিয়ে যান আজাদের মা, সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকেন সারারাত কিন্তু আজাদের আর দেখা পান না। এরপরে আজাদের মা বেঁচে ছিলেন আরো ১৪ বছর, এই ১৪ বছর তিনি কোনোদিন ভাত খায়নি। একবেলা রুটি খেয়েছেন, কখনও কখনও পাউরুটি খেয়েছেন পানি দিয়ে ভিজিয়ে। এই ১৪ বছর তিনি কোনো দিন বিছানায় ঘুমায়নি মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শুয়েছেন।

৩০ আগস্ট ১৯৮৫ বিকাল পোনে ৫ টায় আজাদের মা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে জুরাইন কবরস্থানে মাটি দেওয়া হয়। তার নাম ফলকে লিখা হয় মোসা: সাফিয়া বেগম, শহীদ আজাদের মা।


লেখাঃ মোঃ জাকির হোসেন।