যদ্যপি আমার গুরু
আহমদ ছফা

করোনাকালের এই ছুটিতে সময় কাটানোর এক অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে বই পড়া। আর ইন্টারনেট পিডিএফ এর মাধ্যমে বইের প্রাপ্যতা আরও সহজলভ্য করে তুলেছে। এই সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে আহমদ ছফার লেখা সেই বিখ্যাত 'যদ্যপি আমার গুরু' বইটির পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়া শুরু করি।

একজন শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর আন্তসম্পর্কের প্রকাশ ঘটেছে 'যদ্যপি আমার গুরু' এই বইটিতে। বইটিতে লেখক আহমদ ছফা তার প্রিয় শিক্ষক জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এবং তার কথপোকথন তুলে ধরেছেন।যার মাধ্যমে পাঠক আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের মনীষা এবং তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হবে।

১৯৭০ সালের শেষের দিকে একটি গবেষণার সুপারভাইজার হওয়ার অনুরোধ নিয়ে আহমদ ছফা আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে দেখা করেন। বন্ধুবান্ধব তাকে আগেই হুঁশিয়ারি করেন যে রাজ্জাক সাহেবে বেশ নাক-উঁচু স্বভাবের। যার কারনে বাঘা বাঘা লোকেরাও তার কাছে ঘেঁষতে ভয় পান। এক প্রকার সাহস সঞ্চার করেই তিনি রাজ্জাক সাহেবের সাথে দেখা করেন।
প্রথম পরিচয়ে আহমদ ছফা তার যে তিনটি বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল তা হল তার চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, অবলীলায় ঢাকাইয়া বুলির ব্যবহার, এবং আহমদ ছফাকে তিনি 'মৌলবি আহমদ ছফা' বলে ডাকতেন। তারপর বইটির পাতায় পাতায় কাহিনি পরম্পরায় এগিয়ে চলে তাদের গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক।
ময়লা পাঞ্জাবি, ছেঁড়া গেঞ্জি পড়া মলিন মানুষটি চার দশক ধরে কিভাবে তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে হয়েছেন, সেই কথাই আহমদ ছফা প্রথম পুরুষে তুলে ধরেছেন তার 'যদ্যপি আমার গুরু' বইটিতে।

তবে আফসোসের বিষয় এটাই যে, যে শিক্ষক সম্পর্কে লিখতে গিয়ে প্রতিটি বাক্যে আহমদ ছফা পাঠকের মনে নেশা জাগিয়ে তুলেছেন সেই শিক্ষক কখনই কলম ধরেননি। অথচ অর্থশাস্ত্র, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মত মতামত দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন তিনি। শুধু এগুলোই নয় হেনরি কিসিঞ্জার, লেনিন-মার্ক্স, ধর্মনিরপেক্ষতা- এসবই উঠে এসেছে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের বুলিতে।
রবিন্দ্রনাথ, নজরুল, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শেক্সপিয়ারের লেখার সমালোচনা এবং জসীমউদ্দিনের সঙ্গে রাজ্জাক সাহেবের স্মৃতিকথাও উঠে এসেছে বইটিতে। যে বিষয়গুলোর মাধ্যমে সাহিত্যের প্রতি যেমন মোহ জন্মাবে পাঠক মনে তেমনি আরও শত শত বই পড়ার আগ্রহও সৃষ্টি হবে।
তবে বইটি পড়ে লেখক এবং যার সম্পর্কে লেখা হয়েছে, কে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য সে বিষয়ে হয়তো কনফিউশান থেকেই যাবে পাঠক হৃদয়ে।

বইটি থেকে শিক্ষনীয় কিছু কথা:

**গুরু মুহাম্মদে করি ভক্তি, স্থানে স্থানে প্রকাশিত নিজ মনোউক্তি।

**নতুন কোন জায়গা গেলে দুটি জিনিস খেয়াল করা দরকার। তারা কি খায় আর কি পড়ে।

**বই পড়ার পরে ওই বইয়ের যদি নিজের মতো করে একটা রিভিউ লেখা যায় তাহলে পড়া স্বার্থক মনে করতে হবে, নয়তো পড়া হয় নি।

**বই পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ লেখা নোট করে রাখতে হয়।


_নুসরাত জাহান
সাধারণ সম্পাদক
প্রথম আলো বন্ধুসভা, কুড়িগ্রাম

নির্বাহী সম্পাদক, কাশফুল