"আমারো পরানো যাহা চায়,তুমি তাই,তুমি তাই গো ও, আমারো পরানো যাহা চায়।"দূরের কোনো সাউন্ড সিস্টেম থেকে মৃদু মৃদু ভেসে আসছে গানটা। শরৎকাল,সাদা কাশঁফুল মাঠের মাঝ পথ দিয়ে হেটে যাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক এক যুবক ও এক যুবতী।তাদের পরিচয় আজকের নয়। যেন তারা হাজার বছর ধরে একে অন্যকে জানে। রাতুল গানটি শুনতে পেয়ে মেঘকে বলল,"জানো! গানটি সত্যিই আমার অন্তরের কথাগুলো বলে দিচ্ছে। জনি তুমি আমার অন্তরকে বুঝতে পারো।" মেঘ চুপ করে আছে। কী যেন অজানা কারণ তাকে ভাবাচ্ছে! রাতুল তার পকেটে থাকা অ্যান্ডয়েড মোবাইলটি বের করে বলল," তোমায় আজ নীল শাড়িটাতে খুবই মিষ্টি লাগছে।" রাতুল মেঘের অনিচ্ছার শর্তেও কয়েকটা সেলফি তুললো। ভাবল আজ ফেসবুকের স্টোরিতে দিবে।

একটা কথা বলে রাখা ভালো, আগামী ২৫ এ সেপ্টেমর পরিবারের আলোচনায় মাধ্যমে তাদের বিয়ে। দীর্ঘ ৭ বছরের পবিত্র ভালোবাসার পূর্ণতা পাবে। আশে পাশের এরকম পরিণত প্রেমগাথাগুলো পূর্ণতা পেলে মনে বড়ই প্রশান্তি লাগে। রাতুল বুয়েট থেকে পড়ে ঢাকায় নামকরা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করছে আর মেঘ শিক্ষকতা করছে। তারা ৭ বছর ধরে প্রেমনামক মহাকাব্যের অংশ হলেও তারা তাদের লক্ষ্য থেকে সরে যায়নি। তাদের পবিত্র ভালোবাসা ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব ফেলেনি।  আসলে ভালোবাসাতো এমনি হওয়া উচিৎ!

তারা যেহেতু পরিবারের মতামতে বিয়ে করছে তাই তাদের ছবি স্টোরিতে দিতে বাধা নেই। রাতুল মেঘের মন ভালো করার জন্য অনেক পুরোনো স্মৃতি,হাসি-ঠাট্টা করছে কিন্তু মেঘের মন ভালো হচ্ছে না। " তোমার মনে আছে, সেদিন ঐ শিউলি ফুলের গাছের কাছে আমি তোমায় বিভোর হয়ে দেখতে দেখতে গর্তে আমার পা পড়ে আমি মাটিতে উল্টে পড়েছিলাম। তুমি সেটা দেখে অনেক হেসেছিলে। তোমার হাসির ধ্বনিতে চারিদিক যেন মুখরিত হয়েছিল। সবাই আমাদের দিকে কেমন জানি কটু দৃষ্টিতে দেখছিল। তোমার হাসির সৌন্দর্য দেখার জন্য একটি শিউলি ফুল তোমার মাথায় পড়ে যেন আত্মহত্যা করেছিল।" কিন্তু মেঘ কথা বলছে না। তার মনে অচিন এক নিরবতা খেলা করছে। কথা বলতে বলতে প্রধান সড়কে এসে গেল তারা। আজ ফুটপাতে নাসিম মামা চটপটির দোকান নিয়ে আসেনি তাই তাদের আর চটপটিও খাওয়া হলো না। গতবার যখন দেখা করেছিল তখন তারা মামার দোকান থেকে চটপটি আর ফুচকা খেয়েছিল। সেদিন তো মেঘ ফুচকা খেয়ে থ বনে গিয়ে ছিল। এততাই ঝাল ছিল যে মেঘ হাপিয়ে উঠেছিল আর ৯০ ডিগ্রিতে লাফাচ্ছিল। আজ খালি হাতে,শূন্য অনুভবে অটো রিক্সায় তুলে দিল মেঘকে। আজকে হলো না কোথাও বসে দুষ্টু-মিষ্টি গল্প করা। অবশেষে মন খারাপ করেই গ্যারেজ থেকে রাতুল তার  আর-১৫ বাইকটা নিয়ে পড়ন্ত বিকালে নিজেও বাসার দিকে রওনা দিল। কেন মেঘের মন খারাপ? কেন সে আমায় আজ সব খুলে বলল না? এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে তার মাথায়। চৌরাস্তার মোড়ে রাতুল যখন অমনোযোগিতার সাথে ডান দিকে বাঁক নিতে যাবে ঠিক তখনি আরেকটি বাইক এসে তাকে আঘাত করল। নিঃমিষেই সব ঘটে গেল। রাতুল ছিটকে পড়ে গেল। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। আশে-পাশের মানুষ জড়ো হয়ে তাদের দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। লোকটির চেয়ে রাতুলের অবস্থা গুরুতর। তার শ্বাস-প্রশ্বাস আস্তে আস্তে চলছে। ধমনী-শিরার রক্তপ্রবাহও ধীর গতিতে চলছে। ডাক্তার ও নার্স তাকে অপারেশন থিয়েটার নিয়ে যাচ্ছে।

কী হবে রাতুলের? পূর্নতা পাবে কি রাতুল আর মেঘের মহাকাব্যটি?

লেখাঃ  প্রমিত কুমার রায় দৃশ্য