নোয়াখালী হাউজিং এস্টেটের ভাঙ্গা পুল (কাল ভাট )সংলগ্ন সাদা টাইলস মসজিদের পাশের এই বাড়িটির দিকে তাকালেই মনে পড়ে সাবলেট জীবনের অনেক সমুধুর স্মৃতি ।
তখন নোয়াখালী সদর হাসপাতালে আমার ইন্টার্নি চলছে , , , যে দিনে আমার ডে অফ থাকত বা সরকারী ছুটির দিন হতো সে দিন কাজ ছিল রুমের তৃতীয় তলার দক্ষিণা বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে বাহিরের প্রকৃতি দেখা। সকাল বেলার এই সময়টাতে কখনও কখনও দেখতাম সদ্য স্নানাতা ভদ্র মহিলারা আপন গতিতে অফিসে ছুটে চলার দৃশ্য ।
 কখন ও বা দৃষ্টি নজরে পরত বাবা বা মায়েদের পরম আদুরের সন্তানটিকে হাত ধরে নিয়ে আসছেন আমার বারান্দা বরাবর হাউজিং এস্টেট মালটি মিডিয়া কে জি স্কুলের গেটে।
 কখনো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম বাসার সামনের মসজিদের পাশের ছোট্ট জমিতে অতি যত্নের সাথে বাড়িওয়ালাদের শীত কালীন শাকসবজি চাষের কর্মযজ্ঞ।বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে বাড়িওয়ালা আনটির সবজি ক্ষেতের কাজ দেখতে দেখতে উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করতাম।
 উপলব্দির দৃষ্টিতে দেখতাম যখন বাগানে যেতেন মনে হত অন্তদৃষ্টি দিয়ে গাছগুলোর সাথে বাক্য আলাপ করছেন।আসলে কি সত্যি ?
 মনের বিশেষ ধরনের শুদ্ধতা না থাকলে নাকি গাছের ভাষা বোঝার ক্ষমতা মানুষের জন্মায় না। আন্টির দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়ার কয়েক দিন পর উনি আমাকে নিচে ডেকে আমার ভালো লাগা, মন্দ লাগা শখ এইসব শুনার পর উনার সবজি ক্ষেতে সময় কাটানোর সম্মতি দিলেন।  আমিও আনন্দে আত্মহারা ,মনে মনে যেটি চাচ্ছিলাম। কাজের ফাঁকে ছুটির দিন গুলোতে সকালে নাশতা খাওয়ার পর খুরপি ছোট কোদাল নিয়ে সবজি বাগানে যেতাম ।আগাছা তুলি ,খেতে খুরপি চালিয়ে চারার পাশের মাটি আলগা করে দেই। লাউয়ের সতেজ রুষ্টপুষ্ট নরম ডগা গুলো বরই গাছের জাংলায় উঠতে সাহায্য করি।
 টমেটো গাছের পোকা ধরা পাতা ছিঁড়ে ফেলি । শখ করে লাগানো প্রতি ২ ডজন করে  ফুলকপি, পাতাকপি ,গাজর ,আর শালগমের যত্ন করতে করতে কি ভাবে যে উদ্ভিদ বাচ্চারা আমার অর্ধ দিবস পার করে দিত বুজতেই পারতাম না। পাশের স্কুলের ছুটির ঘণ্টা বাজলেও আমি টের পেতাম না।স্কুল ছুটির পর ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা বাড়ি ফেরার পথে , ক্ষেতের সামনে বেড়া ধরে থমকে দাঁড়তো । কেউ কেউ দুষ্টমি করে পেয়াজ ফুল চুরির ধান্দায় মগ্ন থাকতো। একবার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া শিশির নামের এক বাচ্চাকে পেয়াজ ফুল চুরির অপরাধে দৌড়িয়ে ধরে তার কান টেনে লাল করে দেই।উপড়ে তোলা পেয়াজের ডাঁটা গুলো কুড়িয়ে জমা করে হতবম্ব হয়ে মা যেমন মরা বাচ্চার পাশে বসে থাকে তেমনি বসে রইলাম ভীষণ মন খারাপ করে।পরের দিন তার বিদেশ ফেরত বাবা বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের কাছে নালিস নিয়ে এসে সে যে কি তুমুল কাণ্ড।
ওই দৃশ্য টা মনে পড়লে নিজকে খুবই অপরধী মনে হয়। আজও হাউজিং শব্দটা মনে আসলেই আমার চোখ পরম আনন্দে নেচে উঠে এই সুখময় স্মৃতি গুলো মনে করে , , , চোখ বন্ধ করলেই বারান্দার সামনের স্কুলের শিশুদের হাস্য উজ্জল মুখ দেখতে পাই, তাদের কচিকণ্ঠের চিৎকার শ্রবণে জেগে উঠে আমার শৈশব জীবনের কত কথা কত্ত কথা ।


লেখাঃ নুসরাত এশা
          প্রথমআলো বন্ধুসভা,
          কেরানীগঞ্জ।