চিত্রগল্পঃ


- চাচা! একটা ছবি তুলব?

বয়স্কমতন, রোগাটে এবং খুব সম্ভবত গা থেকে খোলা নিজের গেন্জিটা হাতে নিয়ে হাটুগেড়ে বসা লোকটি চুপচাপ পিছন ফিরে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকালো। ভাবলাম বিরক্তবোধ করেছেন। কিন্তু না, আমাকে অবাক করে দিয়ে খানিকবাদেই দু'পাটি দাঁত বের করে হাসি দিলেন। বুঝে নিলাম এটা "সানন্দে সায়" দেয়া ছাড়া কিছু না। কিন্তু আমার কেনো জানি চাচার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হলো। পাশে গিয়ে বসলাম।

- চাচা, কেমন আছেন?
- ভালাই।
- চাচা, এখানে বসে কি করেন?
- রিশকা চালাই তো, (বলেই একটু দূরে ইশারায় ওনার রিকশাটা দেখালেন, আমি এতক্ষণ খেয়ালই করিনি) একটু হাওয়া খাইতাছি।
- খুব গরম পড়ছে, না চাচা?
- হ ।

কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। ভাবছি কি বলা যায়।

- চাচা, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলব?
- কও ।
- চাচা, ধরেন... এই যে আপনি এত কষ্ট করে রিকশা চালান, অনেক সময় দেখা যায় অনেক টাকাওয়ালা মানুষও ২০ টাকার ভাড়া জেনেশুনেও ১০ টাকা বা ৫ টাকা বাঁচাবার জন্যে অযথা তর্ক করে, যদি কোনোমতে কিছু টাকা বাঁচানো যায়। তখন আপনার কেমন লাগে, চাচা?

আমি একটু কায়দা করে সাচ্ছন্দে বসার চেষ্টা করলাম, অনেকটা দেখানো হেলাফেলা কায়দায় কিন্তু মনোযোগী ভঙ্গিতে। যাতে উনি মনের কথাটুকু বলতে দ্বিধাবোধ না করেন।
ওনাদের অনুভূতিটা জানার চেষ্টা করব আজ।
ব্যাপারটা কাজে দিল।

তিনি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে,

- বাবা, পৃথিবীতে খেইসটা মানুষ (নিচু মানসিকতার মানুষ) যেইঙ্কা (যেরকম) আছে সেইরকম অনেক ভালা মানুষও আছে বাবা। কেউ ২০ টাহার ভাড়া ৩০ টাহাও দিয়া কয়, "ভাই এইটা রাহেন!"

চাচা হালকা হাসি হাসি মুখে আমার দিক থেকে মাথা ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

আমি পুরো হতবাক, হতবম্ব হয়ে গেছি। এটা কি করে সম্ভব! নেগেটিভ সাইট সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে ব্যাপারটাকে পুরো পজিটিভে নিয়ে এলেন! আমি পুরো চুপ হয়ে গেছি। কিছুক্ষণের জন্যে মনে হলো আমি যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে,

- বাবা, ছবি তুলবা না?
- চাচা, তুলেছি।

আমি বুঝতে পারলাম, একজন মানুষ এতো খাটাখাটুনির পরও সবসময় ভালোটা নিয়ে, ভালোটাই ভেবে, সুখে থাকতে চায়। অথচ আমরা?

(কথোপকথন কাল্পনিক)

ছবি ও কাহিনীঃ নেওয়াজ শরীফ।